সহজেই তৈরি করুন পেশাদার সিভি - iqbal's blog

সহজেই তৈরি করুন পেশাদার সিভি

Share This

আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার কাছে উপস্থাপন করার জন্য একটি সুন্দর সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। আজকাল প্রচুর সিভি টেমপ্লেট পাওয়া যায়, যদিও আমি নিজে এই ধরণের টেমপ্লেট একদম পছন্দ করি না। বিশেষ করে সেই সকল টেমপ্লেট যেখানে প্রচুর রঙ ও নক্সা বা ডিজাইন ব্যবহার করে থাকে। এই ধরণের সিভি আমার সামনে আসলে আমার মনে হয়, চাকরি প্রার্থী কিছু লুকাতে চাইছে। আর তাই একটি ওয়ার্ডে তৈরি করা একটি সাধারণ/ মৌলিক টেমপ্লেট আমার কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে হয়। নিচে আমি এইরকম একটি খুব সহজ একটি টেমপ্লেট আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।


আমরা যে জীবনবৃত্তান্তটি তৈরি করবো সেখানে কয়েকটি ভাগ থাকবে-

১। ব্যক্তিগত তথ্য এবং যোগাযোগের তথ্য

২। শিক্ষাগত যোগ্যতা

৩। অভিজ্ঞতার সারাংশ (কাজ অনুযায়ী)

৪। অভিজ্ঞতা 

৫। অন্য কোন বিষয়ে থাকা জ্ঞান

৬। আরও অন্যান্য তথ্য


১। ব্যক্তিগত তথ্য এবং যোগাযোগের তথ্যঃ

সবার শুরুতে আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন সেটি লিখুন, এরপর আপনার পুরো নাম, এবং যোগাযোগের বিশদ যেমন ফোন নম্বর, ইমেল ঠিকানা এবং লিঙ্কডইন প্রোফাইল (যদি প্রাসঙ্গিক হয়) অন্তর্ভুক্ত করে আপনার জীবনবৃত্তান্ত শুরু করুন। যেন সম্ভাব্য নিয়োগকর্তা শুরুতেই বুঝতে পারে আপনে কে এবং কোন পদের জন্য আবেদন করেছেন। 

পদ

 

নাম

 

পিতার নাম

 

মাতার নাম

 

জন্ম তারিখ

 

জাতীয়তা

 

বৈবাহিক অবস্থা

 

বর্তমান ঠিকানা

 

যোগাযোগ

 

২। শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

ডিগ্রি, ডিপ্লোমা বা প্রাপ্ত সার্টিফিকেশন সহ আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য এখানে দিন। প্রতিষ্ঠানের নাম, অধ্যয়নের তারিখ এবং স্নাতকের তারিখগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনার যদি কোনো উল্লেখযোগ্য একাডেমিক কৃতিত্ব বা প্রাসঙ্গিক কোর্সওয়ার্ক থাকে, সেগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করুন। সর্বদা সর্বোচ্চ ডিগ্রী থেকে শুরু করুন এবং নিচে নিচে বসান, নমুনা:

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা (কোন তারিখ থেকে কোন তারিখ পর্যন্ত)

প্রাপ্ত ডিগ্রী বা ডিপ্লোমার নাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা [২০০৫-২০০৯]

ডক্টরেট (পিএইচডি), বাংলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা [২০০৪-২০০৫]

স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স), বাংলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা [২০০০-২০০৪]

স্নাতক, বাংলা

 এইচ.এস.সি [১৯৯৯]

 

৩। অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ কাজ বা অভিজ্ঞতার বিবৃতি:

এখানে আপনি আপনার অভিজ্ঞতা সারসংক্ষেপ আকারে লিখবেন। একটি সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এইটি। এখানে কোন গতবাধা লিখে লিখবেন না। বরং যখন কোন কাজের জন্য আবেদন করবেন, সেই কাজের বিবরণ বুঝে বা আপনার কাছে তারা কি চাচ্ছে এবং সেই চাহিদার কতখানি অভিজ্ঞতা আপনার রয়েছে তা ব্যক্ত করুন। যেন পুরো সিভি না পরেও কর্মকর্তা আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে পারেন। অর্থাৎ এই অংশে আপনি আপনার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা, আপনার মূল দক্ষতা, এবং যোগ্যতাগুলোকে হাইলাইট করবেন। নমুনা:

আমার দীর্ঘ ১০ বছর _____ সেক্টরে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই দীর্ঘ ১০ বছরে আমি __, __, __ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি এবং বর্তমানে আমি ___ প্রতিষ্ঠানে ___ পদের দায়িত্বে রয়েছে। (কাজের খুবই সংক্ষিপ্ত বিবরণ)। এর পূর্বে আমি ____ প্রতিষ্ঠানে ছিলাম। আমার ৫ বছর কর্মী ব্যবস্থাপনা, ২ বছর প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ৭ বছরের প্রশিক্ষণ প্রদানের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি ____ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় পিএইচডি করেছি। (এক পরিচ্ছদ বা প্যারাগ্রাফ)

এখন যারা নতুন বা ফ্রেশার তারা এখানে যে কাজের জন্য আবেদন করছেন সেই আলোকে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন - ধরুন আপনি ব্যাংকের জুনিয়র ব্যবস্থাপক হিসাবে চাকরির জন্য আবেদন করছেন, কিন্তু কোন অভিজ্ঞতা নেই, তাহলে আপনি কি করবেন -

সাম্প্রতিক স্নাতক ডিগ্রী প্রাপ্য এবং ব্যাংকিং শিল্পে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন। ফাইনান্সিয়াল প্রিন্সিপাল এবং অ্যানালিটিকাল স্কিল সম্বলিত, আমি একজন জুনিয়র ম্যানেজার হিসাবে একটি স্বনামধন্য ব্যাঙ্কের সাফল্যে অবদান রাখতে আগ্রহী। গ্রাহক পরিষেবার শ্রেষ্ঠত্ব - এর উপর ফোকাস রেখে, আমি ব্যতিক্রমী এক আন্তঃব্যক্তিক এবং যোগাযোগ রক্ষার দক্ষতা তৈরি করতে পারবো, যা আমাকে গ্রাহকের চাহিদা বুঝতে এবং পূরণ করতে সক্ষম করবে বলে মনে করি। আমার অ্যানালিটিকাল অ্যাবিলিটি বা ক্ষমতা, এবং সহযোগিতামূলক মানসিকতা এবং ক্রমাগত শেখার ইচ্ছা, আমাকে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে, দলকে নেতৃত্ব দিতে এবং গতিশীল ব্যাঙ্কিং পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে। আমি নিশ্চিত যে আমার উদ্যম, উত্সর্গ এবং দৃঢ় কাজের নীতি আমাকে আপনার প্রতিষ্ঠানের একটি মূল্যবান সম্পদ করে তুলবে।

৪। অভিজ্ঞতাঃ

আপনার সাম্প্রতিক বা বর্তমান অবস্থান থেকে শুরু করে বিপরীত কালানুক্রমিক ক্রমে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা তালিকাভুক্ত করুন। চাকরির শিরোনাম, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের নাম, চাকরির তারিখ এবং আপনার দায়িত্ব এবং কৃতিত্বের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করুন। পরিমাপযোগ্য কৃতিত্বের উপর ফোকাস করুন এবং প্রাসঙ্গিক দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাগুলি হাইলাইট করুন । নমুনা:

তারিখ

প্রতিষ্ঠানের নাম

পদ এবং স্থান

কাজের বিবরণ

জানুয়ারি ২০২১ থেকে বর্তমান

এবিসিডি

মার্কেটিং ম্যানেজার

·   বিপণন কৌশল উন্নয়নশীল

·   বিপণন প্রচারাভিযান তৈরি করা

·   বিজ্ঞাপন এবং প্রচার পরিচালনা

·   বাজার গবেষণা পরিচালনা করা

·   বিপণন কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ

·   মার্কেটিং বাজেট পরিচালনা

·   টিম ম্যানেজমেন্ট এবং সহযোগিতা

মার্চ ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০২০

কেএলএম

ম্যানেজার

 

 

 

 

 


৫। অন্য কোন বিষয়ে থাকা জ্ঞান

এখানে আপনি আপনার অন্য কোন জ্ঞান বা কাজের অভিজ্ঞতা, যেমন ধরুন - ভলান্টিয়ার অভিজ্ঞতা, কোন ধরণের টেকনিক্যাল অভিজ্ঞতা (কম্পিউটার চালাতে পারেন, গ্রাফিক্সের কাজ করা অভিজ্ঞতা, ড্রাইভিং পারেন, ইত্যাদি)। 

৬। আরও অন্যান্য তথ্যঃ

আপনার প্রাসঙ্গিক অন্যান্য তথ্য এখানে লিখুন। যেমন -

প্রকাশনা: আপনি লিখেছেন বা অবদান রেখেছেন এমন কোনো গবেষণাপত্র, নিবন্ধ বা প্রকাশনার তালিকা করুন। টেবিল আকারে সুন্দর করে প্রস্তুত করুন।

প্রকল্প: লক্ষ্য, আপনার ভূমিকা এবং অর্জিত ফলাফল সহ আপনি যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলিতে কাজ করেছেন তা হাইলাইট করুন।

স্বেচ্ছাসেবক কাজ: আপনার প্রতিশ্রুতি, নেতৃত্ব, বা প্রাসঙ্গিক দক্ষতা প্রদর্শন করে এমন কোনো স্বেচ্ছাসেবক অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত করুন।

পুরষ্কার এবং সম্মান: আপনি আপনার পেশাদার বা একাডেমিক কর্মজীবনে প্রাপ্ত কোনো প্রশংসা বা স্বীকৃতি উল্লেখ করুন।


ফরম্যাটিং এবং প্রুফরিডিং:

পেশাদার ফন্ট, উপযুক্ত ফন্ট সাইজ এবং স্পষ্ট শিরোনাম ব্যবহার করে, জীবনবৃত্তান্ত এর প্রতিটি অংশ যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, কোথাও এরিয়েল, কোথাও টাইমস নিউ রোমান বা ক্যালিব্রি অথবা কোথাও ফন্ট সাইজ ১০, কোথাও ১১ বা ১২ করবেন না। পঠনযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য সাদা স্থান এবং বিষয়বস্তুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন। কোনো বানান বা ব্যাকরণগত ত্রুটি পরীক্ষা করে আপনার সিভি/জীবনবৃত্তান্ত ভালোভাবে প্রুফরিড করুন। আপনার ক্ষেত্রের একজন বিশ্বস্ত সহকর্মী বা পেশাদারের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া চাওয়ার কথা বিবেচনা করুন। দয়া করে নানা রঙ দিয়ে টেবিল তৈরি করবে না, যথা সম্ভব সাদা এবং অ্যাশ কালারের মধ্যে থাকবেন।

No comments:

© 2007-2023 IQBAL AHSAN